হানি নাটস কখন খাওয়া উচিত?
হানি নাটস খাওয়ার সব থেকে ভালো সময় হচ্ছে দিনের বেলা। বিশেষ করে সকাল ও দুপুরের মাঝখানে নাস্তা হিসেবে হানি নাটস খাওয়া সব থেকে বেশি স্বাস্থ্যকর। আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এই সুপার ফুড আমরা সকালে খালি পেটে অথবা রাতে কেন খেতে পারবো না? এর পেছনে সব থেকে বড় কারণ হচ্ছে হানি নাটস শুঁকনো ফল, বাদাম ও মধু দিয়ে তৈরি হয়।
এগুলো প্রত্যেকটি খাবার পুষ্টিগুণের দিক থেকে সব থেকে উপরে অবস্থান করে। অর্থাৎ পুষ্টিগুণ বিবেচনা করলে আমাদের দেহের জন্য হানি নাটস সব সময় উপকারী হিসেবে কাজ করে না। তাছাড়া এতে থাকা উপাদান আমাদের হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
তো ভরা পেটে এই খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ এই সময় আমাদের পেটের অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপ স্বাভাবিকভাবে ঘটতে থাকে। এই সময় হানি নাটস খেলে তা কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে না। তাছাড়া হানি নাটসে থাকা উপাদান গুলো হজম হতে সময় লাগে। যে কারণে পেট খালি থাকলে আপনি অতিরিক্ত খেয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে যা দীর্ঘসময় আপনার পেট পরিপূর্ণ রাখে।
এতে আপনি সকালে অথবা রাতে স্বাভাবিক খাবার খেতে পারবেন না। যা পরোক্ষ দৃষ্টিতে আপনার স্বাস্থ্য হানি করবে। যদিও হানি নাটস থেকে পুষ্টিগুণ পাবেন কিন্তু স্বাভাবিক খাবার আমাদের দেহের জন্য অনেক বেশি প্রয়োজনীয়। মোটকথা, সারাদিনে হাতের তালু হিসেবে একজন প্রাপ্তবয়স্কের এক মুঠো অথবা ১ চা চামচ হানি নাটস খাওয়া উচিত। এর বেশি হলে তা উপকারের থেকে অপকার করবে বেশি।
তাছাড়া বিভিন্ন পুষ্টিবিদদের মতে এখন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বা নারি যার কোন স্বাস্থ্য সমস্যা নেই সে দিনে ৫০-৬০ গ্রাম হানি নাটস খেতে পারবে। অন্যদিকে ছোট বাচ্চা এবং বয়স্ক ব্যক্তির জন্য এই খাবার কখনোই উপযুক্ত নয়। কারণ হানি নাটসের মধুতে অতিরিক্ত ক্যালোরি থাকে যা বাদামের ক্যালোরির সাথে মিশে অনেক গুন বেড়ে যায়।
এতে শরীরে বাড়তি ওজন বৃদ্ধি পায় এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। এগুলো কখনোই একজন শিশু ও বয়স্ক মানুষের জন্য উপকারী নয়।
হানি নাট খেলে কি ওজন বাড়ে?
শরীরে ওজন বৃদ্ধি পাওয়া কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর নির্ভর করে না। তবে কিছু কিছু বিষয় আছে যা দ্বারা ওজন বৃদ্ধি পাওয়া নির্ধারণ করা যায়। চলুন সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করি।
চর্বি বা ফ্যাট
দেহে ওজন বাড়ার সাথে চর্বি বা ফ্যাটের সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে। আমরা যখন খাবার খাই তা থেকে দেহে উপকারী ও অপকারী দুই ধরনের ফ্যাট জমা হয়। এদের মধ্যে কিছু আছে যা আমাদের দেহের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। কিছু চর্বি আছে মস্তিস্কে হরমোন নিয়ন্ত্রণ ও নতুন করে তৈরি হতে সাহায্য করে। আর কিছু ফ্যাট আছে যেগুলো কোষের মধ্যে জমা হয় এবং মেদ বৃদ্ধি করা সহ অস্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধি করে।
যেহেতু হানি নাটস বিভিন্ন প্রকারের বাদাম, বীজ ও মধু দিয়ে তৈরি করা হয় সেহেতু এটি থেকে অনেক বেশি পরিমাণে চর্বি দেহে জমা হয়। এদের মধ্যে থাকা উপকারী ফ্যাট আমাদের কাজে লাগলেও ক্ষতিকারক গুলো দেহে বাসা বাধে এবং ওজন বৃদ্ধি করে। তবে যদি পরিমিত পরিমাণে হানি নাটস খাওয়া হয় তাহলে তা ওজন বৃদ্ধি করে না। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া হলে তা চর্বি জমিয়ে দেহের ওজন বৃদ্ধি করে পাশাপাশি হার্টের বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে।
ক্যালরি
ক্যালরি হচ্ছে আমাদের দেহের প্রধান শক্তির উৎস। অর্থাৎ দেহ ক্যালরি বার্ন করেই পরিচালিত হয়। আমাদের দেহের ক্যালরি জমানোর কোনো লিমিট নেই। এতে যত বেশি ক্যালরি দেওয়া হোক তা সংগ্রহ করে রাখে। আপাত দৃষ্টিতে এটি আমাদের জন্য উপকারী মনে হলেও এতে কিছু সমস্যা আছে। যেমন আমরা প্রতিদিন যে খাবার খাই তা থেকে ক্যালরি পাই। যেটুকু আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজন সেটুকু স্বাভাবিক খাবার থেকেই পাওয়া যায়।
যখন হানি নাটসের মত স্পেশাল খাবার খাওয়া হয় তখন তা আমাদের দেহে ক্যালরির তারতম্য ঘটায়। ধরুন একটি পানির পাইপে আপনি মাথা চেপে রেখে ফুল স্পিডে পানি ছেড়ে দিলেন। সেই পাইপ তার ধারণ ক্ষমতার পর্যন্ত পানি যাওয়ার পর অতিরিক্ত পানির চাপে ফুলে যাবে এবং এক পর্যায় তা ফেটে যাবে।
অতিরিক্ত ক্যালোরি আমাদের শরীরের সাথে ঠিক এমনি কর্মকাণ্ড ঘটায়। সাধারণত ড্রাই ফ্রুটস ও হানি নাটসে অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যালরি থাকে। যা পরিমাণের অধিক খাওয়া হলে দেহে বেশি পরিমাণে ক্যালোরি সাপ্লাই করে। এই ক্যালোরি দেহে অস্বাস্থ্যকর চর্বির জন্ম দেয় যা সরাসরি ওজন বৃদ্ধি করে।
চর্বি বার্ন না হওয়া
দেহের চর্বি বার্ন করার জন্য সব থেকে কার্যকরী পদ্ধতি হচ্ছে কায়িক পরিশ্রম করা। কারণ কায়িক পরিশ্রম করলে তা দেহের প্রতিটি অর্গানের নড়াচড়া করায় যা চর্বি গলাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে পরিশ্রম করলে শরীর তার ভেতরে থাকা কেমিক্যাল গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এতে শরীর ক্যালরির সঠিক বণ্টন ও প্রযোজনা করতে পারে।
তাছাড়া পরিশ্রম করলে আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ঘাম ঝরে। এই ঘামের মাধ্যমেই দেহের সকল ক্ষতিকর গ্যাস, ময়লা, অতিরিক্ত চর্বি ইত্যাদি বের হয়ে যায়। বিশেষ করে নিয়ম মেনে ব্যায়াম করলে তা শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে হার্ট সচল ও কর্মক্ষম রাখে।
অন্যদিকে শরীর থেকে চর্বি বের করে দেওয়ার এই কার্যকরী পদ্ধতি ব্যবহার না করলে তা ওজন বৃদ্ধি করে। তাছাড়া অলস দেহে বিভিন্ন রকমের রোগ দেখা দেয়।
অতিরিক্ত খাওয়া
অতিরিক্ত খাওয়া আমাদের দেহের জন্য নীরব ঘাতক হিসেবে কাজ করে। বর্তমান সময়ে আমরা যে ধরনের খাবার খাই তার বেশিরভাগ অরগানিক হয় না। বিভিন্ন রকমের কীটনাশক ও কেমিক্যাল ব্যবহার করে ফসল আবাদ করা হয়। এগুলো মানব স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
তার মধ্যে আমরা যখন বেশি বেশি খাবার গ্রহণ করবো তখন তা প্রয়োজনের অধিক ক্যালরি যোগান দেবে। যা আমাদের শরীরের চর্বির মাত্রা বৃদ্ধি করবে এবং হার্ট দুর্বল করবে। এতে শরীর থেকে অতিরিক্ত চর্বি এবং ক্যালরি বার্ন হবে না এবং স্থূলতা বৃদ্ধি পাবে। তার উপরে যদি হানি নাটস খাওয়া হয় তবে তা মরার উপর খারার ঘা হিসেবে কাজ করবে।
অর্থাৎ ওজন বৃদ্ধি হওয়ার পেছনে প্রয়োজনের অধিক হানি নাটস খাওয়া সব থেকে বেশি কাজ করে। তবে এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য এই খাবার খাওয়ার আগে আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। তো হানি নাটস খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন যে আপনি অপুষ্টিতে ভুগছেন কিনা। যদি সব ঠিক থাকে তবে খাওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে পুষ্টিহীনতা থাকলে এবং অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, অ্যালার্জি, কোলেস্টেরল, হার্টে সমস্যা ইত্যাদি না থাকলে হানি নাটস খাওয়া যেতে পারে।
হানিনাট খেলে কি হয়?
হানি নাটস একটি উচ্চ পরিমাণে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার। এতে দেহের জন্য উপকারী সকল ধরনের উপাদান উপস্থিত। নিচে এর উপকারী দিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
শরীর উত্তপ্ত রাখে
হানি নাটস শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। বিশেষ করে শীতকালে এই খাবার খেলে দেহ গরম থাকে এবং ঠান্ডা কম লাগে। বিশেষত হানি নাটে থাকা বাদাম ও মধু পরোক্ষভাবে শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে তাপমাত্রা বাড়ায়।
যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে
আমরা জানি মধু, বাদাম ও খেজুর যৌন শক্তি বৃদ্ধি করার কাজ করে। এই সকল উপাদানে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করার উপাদানের পাশাপাশি বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকে যা বীর্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে ও যৌন ক্ষমতা বাড়ায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
হানি নাটসে থাকা সকল উপাদান এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে দেহের মধ্যে থাকা রোগ সারিয়ে তুলতে এবং জীবাণুর আগমন ও বিচরণ বন্ধ করতে হানি নাটস অনেক ভালো কাজ করে। তাছাড়া মধু এবং কালোজিরা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য বিশ্বব্যাপি ব্যাপকভাবে সুপরিচিত।
রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে
একটি দেহে যখন রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে তখন তা এমনিতেই বেশি সুস্থ থাকবে। কারণ সঠিক মাত্রার রক্ত চলাচলের কারণে কোষের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। হার্ট সঠিকভাবে কাজ করে এবং হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়। তাছাড়া স্বাভাবিক রক্ত চলাচল খাবারের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করা পুষ্টি উপাদান দেহের বিভিন্ন স্থানের কোষের মধ্যে পৌঁছে দেয়।
কিডনির যত্ন নেয়
কিডনি আমাদের দেহের একটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু আমরা অবহেলায় এই অঙ্গের ক্ষতি করে ফেলি। তবে পরিমিত হানি নাটস গ্রহণ করলে সহজেই কিডনি সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখা যায়। কারণ এই মিশ্রণে প্রয়োজনীয় সকল উপাদান থাকে যা কিডনির সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে।
ভিটামিন ও খনিজের যোগান দেয়
হানি নাটস একটি ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের কারখানা। এখানে প্রায় সকল ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান পাওয়া যায়। ভিটামিন ও খনিজ আমাদের দেহের জন্য কি কি উপকার করে তা বলে শেষ করা যাবে না। সর্বোপরি হানি নাটস খেলে আমাদের দেহের পুষ্টি উপাদানের তারতম্য ঠিক হয় এবং আমরা সুস্থ থাকতে পারি। এটি আমরা সম্পূরক খাদ্য আমাদের স্বাভাবিক খাবারের সাথে গ্রহণ করতে পারি।
হানি নাট খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। তবে নিরাপদ ন্যাচারাল খাবারে পুষ্টিগুনের পাশাপাশি মানব শরীরের জন্য বেস্ট পুষ্টির পাওয়ার হাউস। কিন্তু আপনার শরীরের খাদ্য হজম ও খাওয়ার ক্যাপাসিটি অনুযায়ী পরিমিত খাবার খেতে হবে। তবেই সঠিক পুষ্টি ও উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।
উপরিউক্ত আলোচনায় হানি নাটস কি করে আমাদের জীবন ধারণে উপকারী ভূমিকা রাখে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি লেখাটি পরে হানি নাটস সম্পর্কে আপনার ভুল ধারণা দূর হয়েছে এবং এর উপকারী দিক সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছেন।
Anonymous –
আস্সালামু আলাইকুম
আমি সুনাম ফুড থেকে দুই বার হানিনাট নিয়েছিলাম।।। এত ভালো প্রিমিয়াম প্রোডাক্ট।। আমি অনেক উপকার পেয়েছি।। আলহামদুলিল্লাহ।
RA KIB –
এটা এক কথায় অসাধারণ। ধন্যবাদ ভাই এত সুন্দর প্রিমিয়াম কোয়ালিটির পন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে নিয়ে আসার জন্য।সুনাম ফুডের ফয়সাল ভাইয়ার হানি নাট এর একজন রেগুলার কাস্টমার আমি।